সাতকানিয়ায় মসজিদ কমিটি নিয়ে বিরোধে খুন, গ্রেপ্তার ৪

চট্টগ্রাম, সারাদেশ, ৮ জুন ২০২৫, 52 বার পড়া হয়েছে,

এম নাজিম মাহমুদ, সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় মসজিদ পরিচালনা কমিটির নেতৃত্ব নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ অবশেষে হত্যাকাণ্ডে রূপ নিয়েছে। গতকাল শনিবার (৭ জুন) দিবাগত মধ্যরাতে উপজেলার এওচিয়া ইউনিয়নের দেওদিঘি গ্রামে সংঘটিত এই ঘটনায় মো. দিদারুল আলম (৪৫) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। তিনি একই এলাকার মৃত এজাহার মিয়ার ছেলে।

পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে চার সহোদরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—দেওদিঘি গ্রামের মৃত নুরুল ইসলামের চার ছেলে: মো. নাজিম উদ্দীন (৩৪), মো. নুরুল ইসলাম আজিম (৩০), মো. সাইফুল আজম (৪১) এবং মো. সরওয়ার আজম (৫০)।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার রাতে দিদারুল আলমের ঘরে তার চাচাতো ভাই মো. সোহেলের বিয়ের বিষয় নিয়ে এক পারিবারিক বৈঠক বসে। আলোচনায় এলাকার প্রভাবশালী ও মসজিদ পরিচালনা কমিটির কয়েকজন সদস্যও উপস্থিত ছিলেন। কথাবার্তার একপর্যায়ে স্থানীয় মসজিদের কার্যক্রম, ইমাম নিয়োগ এবং অর্থব্যয়ের স্বচ্ছতা নিয়ে মতানৈক্য দেখা দেয়।
বিশেষ করে, গত ঈদের সময় মসজিদের অনুদান ও ফিতরা বণ্টনকে কেন্দ্র করে পূর্বের একটি বিরোধ পুনরায় মাথাচাড়া দেয়। দিদারুলের সঙ্গে মৃত নুরুল ইসলামের ছেলেরা—যারা দীর্ঘদিন ধরে মসজিদের সম্পদ ব্যবস্থাপনায় আধিপত্য রাখতেন—তর্কে জড়ান। মুখোমুখি কথার লড়াই দ্রুত উত্তপ্ত হয়। একপর্যায়ে চার ভাই মিলে দিদারুলকে কিল-ঘুষি মারতে শুরু করেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। প্রচণ্ড আঘাতে দিদারুল মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মসজিদ কমিটির নেতৃত্ব নিয়ে গত এক বছর ধরেই এলাকাব্যাপী চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছিল। সম্প্রতি পরিচালনা কমিটি পুনর্গঠনের দাবি জোরালো হলে দুই পক্ষের মধ্যে বৈরিতা আরও তীব্র হয়। নিহত দিদারুল ছিলেন নতুন কমিটি গঠনের পক্ষে, আর গ্রেপ্তার চার ভাই ছিলেন বর্তমান কমিটির নিয়ন্ত্রণকারীদের অন্যতম।

ঘটনার খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে ছুটে যায় সেনাবাহিনী ও পুলিশ। অভিযান চালিয়ে জড়িত চার সহোদরকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসা হয়। নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (চমেক) মর্গে পাঠানো হয়েছে।

সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহেদুল ইসলাম বলেন, একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানে মসজিদ কমিটি নিয়ে হঠাৎ উত্তপ্ত কথাবার্তা শুরু হয়। প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, পূর্ববিরোধের জেরেই এই হত্যাকাণ্ড। অভিযুক্ত চার ভাইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া চলমান।

দেওদিঘি গ্রামে এখন থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। হত্যাকাণ্ডের পরদিন রবিবার সকাল থেকে এলাকায় পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে। আতঙ্কে অনেকে বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না।

নিহত দিদারুল আলম ছিলেন তিন সন্তানের জনক। এলাকার গণ্যমান্য ও সক্রিয় সামাজিক কর্মী হিসেবেও পরিচিত ছিলেন তিনি। তার মৃত্যুতে স্থানীয় সমাজে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।