আলফাডাঙ্গায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কে লিলিয়ে প্রধান শিক্ষককে পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন

শিক্ষাঙ্গন, সারাদেশ, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, 17 বার পড়া হয়েছে,

কবীর হোসেন, আলফাডাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। শিক্ষা মন্ত্রণলায় থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনও মানছে না শিক্ষার্থীরা। পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার শিরগ্রাম বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আইয়ুব আলী মৃধার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে বহিরাগত কিছু মানুষের প্ররোচনায় প্রতিষ্ঠানটির কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থী প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবী তুলেন।এনিয়ে গত সোমবার বিদ্যালয়ের প্রধান ফটক বন্ধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা। এরপর মঙ্গলবার ওই শিক্ষার্থীরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট একটি স্মারকলিপি জমা দেন। সেইসঙ্গে উপজেলা পরিষদ চত্বরেও তারা প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল করেন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফলে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের উদ্ভূত পরিস্থিতিকে পুঁজি করে একশ্রেণির স্বার্থান্বেষী মহল বহিরাগত কিছু ছেলেকে লেলিয়ে বিদ্যালয়ের কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থীদের দিয়ে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। যেখানে গত ৩ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপন জারী করে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দিয়েছেন, শিক্ষকদের জোর করে পদত্যাগ ও নানাভাবে হেনস্তা করার ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অপকর্মের অভিযোগ থাকলে সে বিষয়ে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। সেইসঙ্গে শিক্ষকদের জোরপূর্বক পদত্যাগ এবং হেনস্তায় অংশগ্রহণকারী ও শৃঙ্খলাভঙ্গকারীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এমন কঠোর নির্দেশনাকে অমান্য করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উস্কে দিয়ে ক্লাস বর্জন করে তাদের দিয়ে আন্দোলন করাচ্ছেন একটি কুচক্রী মহল। বিশিষ্টজনরা বলছেন, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দিয়ে একটি কুচক্রী মহল তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে নীরবে কাজ করে যাচ্ছে। এতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার বিপ্লবে অর্জিত বিজয় আজ প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের মা-বাবা ও অভিভাবকদের এগিয়ে আসতে হবে। সন্তানদের আন্দোলন থেকে সরিয়ে রাখতে হবে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে নিরব না থেকে দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হবে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, কয়েকমাস আগে বিদ্যালয়ের সামনে বহিরাগত একদল উচ্ছৃঙ্খল যুবক মেয়েদের নিয়মিত ইভটিজিং করতো। এ ঘটনা নিয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আইয়ুব আলী মৃধা ওই বহিরাগত যুবকদের প্রতিবাদ করায় তারা ক্ষিপ্ত হন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের নেপথ্যে ওই যুবকরা রয়েছেন। এছাড়া বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি অংশ নীরবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যেতেও ইন্ধন দিচ্ছে। এতে করে পরিস্থিতি আরও সংকটাপন্ন হচ্ছে। শিরগ্রাম বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য কাজী আবুল খায়ের বলেন, ‘কোন শিক্ষক অনিয়ম-দুর্নীতি করলে সুনির্দিষ্ট প্রমাণসহ আমাদের কমিটির নিকট অভিযোগ দেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের বলেছি। কিন্তু তারা আমাদের নিকট কোন অভিযোগ না দিয়ে ক্লাস বর্জন করে আন্দলোন শুরু করেছে। যা কোনভাবেই কাম্য নয়।

স্থানীয় ইউপি সদস্য রাজ ইসলাম খোকন বলেন, ‘একজন শিক্ষক যদি দুর্নীতিগ্রস্ত হন তাহলে তার বিরুদ্ধে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ করা হোক। বিধিমোতাবেক তাকে অপসারণ করা হবে। কিন্তু কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ক্লাস বর্জন করে আন্দোলন করার বিষয়টি দুঃখজনক। এতে বিদ্যালয়ের সুনাম নষ্ট হচ্ছে।’ এবিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফরিদপুর জেলার অন্যতম সমন্বয়ক আবরার নাদিম ইতু জানান, ‘আন্দলোন করে কোন প্রতিষ্ঠান প্রধান বা শিক্ষককে জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করা যাবে না। কোনো শিক্ষক অনিয়ম দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এই মূহুর্তে যাতে কেউ কোনো আন্দোলন না করে সেজন্য কেন্দ্রীয় নির্দেশনা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন। জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আইয়ুব আলী মৃধা জানান, ‘মিথ্যা, বানোয়াট ও কাল্পনিক কাহিনী সাজিয়ে আমার বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নামিয়েছে একটি চিহ্নিত কুচক্রী মহল। একটি বিদ্যালয়ের সকল নিয়মনীতি সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী পরিচালিত হয়। স্কুলের প্রতিটি কাজ পরিচালনা কমিটির মাধ্যমে ধারাবাহিক ও স্বচ্ছতার মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এখানে ব্যক্তিগত ধারণা প্রতিষ্ঠার অবকাশ নেই।’ আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বর্তমান বিদ্যালয়ের সভাপতি সারমীন ইয়াছমীন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের একটি স্মারকলিপি পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে গুরুত্বের সহিত অধিকতর তদন্ত করা হবে। তদন্তে প্রমাণিত হলে নিয়মতান্ত্রিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিক্ষকদেরকে অসম্মানজনকভাবে পদত্যাগে বাধ্য করা যাবে না।