‘‘সীমান্তে যদি মানুষ মরে, সেভেন সিস্টার্স থাকবে না রে’’

শিক্ষাঙ্গন, সারাদেশ, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, 23 বার পড়া হয়েছে,

তানভীর ইবনে মোবারক

সীমান্তে শিশু হত্যা ও ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে মশাল মিছিল করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। আজ বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ‘আধিপত্যবাদ বিরোধী মঞ্চ’-র ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার এলাকা থেকে মশাল মিছিলটি শুরু হয়ে ট্রান্সপোর্ট চত্ত্বর হয়ে শহীদ সালাম-বরকত হল হয়ে বটতলায় এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।

এসময় মিছিলে তাদেরকে ‘জাহাঙ্গীরনগরে চলবে না, ভারতীয় প্রকল্প’, ‘মোদির দুই গালে, জুতা মারো তালে তালে’, ‘সীমান্তে যদি মানুষ মরে, সেভেন সিস্টার্স থাকবে না রে’, ‘সীমান্তে যদি মানুষ মরে চিকেন নেক থাকবে না রে’, ‘মোদীর গদীতে আগুন জ্বালো একসাথে’, ‘আর এসএসের বিরূদ্ধে, আগুন জ্বালো একসাথে’, ‘ভারতীয় প্রকল্প, চলবে না-চলবে না’, ‘বিজেপির আগ্রাসন, চলবে না-চলবে না’, ‘সাংস্কৃতিক আগ্রাসন, চলবে না-চলবে না’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে শোনা যায়।

সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী নজরুল ইসলাম নাইমের সঞ্চালনায় বক্তারা ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখেন। তাদের বক্তব্যে ভারতীয় আগ্রাসন, আধিপত্যবাদ, সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক আগ্রাসন উঠে আসে। এছাড়া দুদেশের মধ্যে যেসব দ্বিপাক্ষিক চুক্তি রয়েছে সেগুলো যেন দুপক্ষের সমন্বয়ে হয়, ভারত যেন আধিপত্য বিস্তার করতে না পারে সেগুলো তুলে ধরা হয়।

নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী শোয়াইব হাসান বলেন, যদি নূন্যতম কোন বন্ধুত্বের আকাঙ্খা থাকে থাকে তাহলে সীমান্তে হত্যা বন্ধ করতে হবে। আমি আজকের এই মিছিল থেকে বলতে চাই, যে সমস্ত বিএসএফ এই সীমান্তে হত্যার সাথে জড়িত তাদেরকে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। সীমান্তে হত্যার বিষয়ে বাংলাদেশকে শক্ত অবস্থান নিতে হবে।

আহসান লাবীব বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের একটি বিষফোড়া রাষ্ট্র আছে সেটি হচ্ছে ইসরায়েল। তারা মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি বিনষ্ট করেছে তারা। তেমনি উপমহাদেশের একটি বিষফোড়া রাষ্ট্র হলো ভারত। আমাদের দেশে ১৫ বছর যে আওয়ামী রেজিম ভহিল তারা কখনো সীমান্ত হত্যার বিচার চায় নি। ভারতীয় তাবেদার এই হাসিনা সরকার সীমান্ত হত্যার নিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেয় নি। অন্তর্বতীকালীন সরকারের কাছে আমাদের আবেদন আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে এই সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে হবে।

এছাড়া, ভারত আমাদেরকে যে রাজনৈতিক আগ্রাসন করা হয়, সেগুলো বন্ধ করতে হবে। বিজেপির আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমাদের আওয়াজ বন্ধ হবে না। এছড়া ভারত ছাড়াও অন্য যে দেশ আমাদের উপর আধিপত্য বিরাজ করতে চায় তাদেরকে হুশিয়ারি করে দিতে চাই, এসব আর বরদাস্ত করা হবে না।

আধিপত্য বাদ বিরোধী মঞ্চের আহবায়ক আনজুম শাহরিয়ার বলেন, আমরা দেখেছি কিছুদিন আগেই আমাদের দেশের ২০টি জেলাকে বন্যার মাধ্যমে ডুবিয়ে দেয়া হয়েছে। এর কিছুদিন পরেই আমরা দেখেছি সীমান্তে স্বর্ণা দাসকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা আওয়ামী রেজিমে কোন হত্যার বিচার পাই নি৷ আমরা হুশিয়ার করে দতে চাই যদি এ ধরণের আগ্রাসন আমাদের দেশে চলতে থাকে আমরা বসে থাকবো না। আমরা দেখেছি, গত ২০২১ সালে ১৮ জন, ২০২২ সালে ২৩ জন, ২০২৩ সালে ৩১ জনকে হত্যা করা হয়েছে সীমান্তে। ২০০৯ সাল থেকে প্রায় ৬০০র অধিক মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এগুলো সুষ্ঠু বিচার দাবির করছি।

তিনি আরও বলেন, ভারতের প্রকল্পকে আমরা আধিপত্যবাদেরই অংশ হিসেবেই মনে করছি। ভারতের অধীনে কোন প্রকল্প এই জাহাঙ্গীরনগরে চলতে দেয়া হবে না। যদি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কোন দ্বিপাক্ষিক কোন চুক্তি করতে হয় তবে সেটা হতে হবে স্মানে সমান। সেখানে যদি কোন আধিপত্য দিল্লি বিরাজ করতে যায় তাহলে সেটা মেনে নেয়া হবে না।

উল্লেখ্য, গত রবিবার মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে নিহত স্কুলশিক্ষার্থী স্বর্ণা দাসকে হত্যা করার পর মরদেহ ৪৫ ঘণ্টা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।বিএসএফের গুলিতে নিহত স্বর্ণা দাস (১৬) মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের কালনীগড় গ্রামের পরেন্দ্র দাসের মেয়ে। সে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। সে হত্যার বিচার চেয়ে ও ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে এই মশাল মিছিলটি আয়োজন করা হয়।