সুরেশ চন্দ্র রায়, মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি।
মানিকগঞ্জের ঘিওরে একটি মাটি ব্যবসায়ী চক্র রাতের আঁধারে ফসলি জমি নষ্ট করে মাটি বাণিজ্য করায় কৃষকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে মাটি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে বলে থানা সূত্রে জানা গেছে।
সোমবার( ৮ এপ্রিল) দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের পুখুরিয়া ও বড় ধূলণ্ডী মৌজার বেশ কিছু ফসলি জমির মাটি কাটা হয়েছে।
এসময় ধূলণ্ডী গ্রামের জাবেদ আলীর ছেলে আব্দুস সামাদ এবং নিমাই মল্লিকের ছেলে গহের মল্লিক জানান, কৃষকদের না জানিয়ে ধূলণ্ডী গ্রামের মৃত, কিতাব আলীর ছেলে লিটনের নেতৃত্বে মাটি ও ভেকু ব্যবসায়ী মো.হাসেম আলী রাতের আঁধারে ফসলি জমির মাটি কেটে ডাইবেশন তৈরির চেষ্টা করছিল। মাটি কাটা বন্ধ করার জন্য মাটি ব্যবসায়ীদের কয়েক দফা অনুরোধ করা হয়। কিন্তু মাটি ব্যবসায়ীরা কৃষকদের অনুরোধ উপেক্ষা করে মাটি কাটার সিদ্ধান্তে অটল থাকায় স্থানীয় কৃষকদের পক্ষে ধূলণ্ডী গ্রামের জাবেদ আলীর ছেলে সেকেন্দার আলী ও সেন্টু মিয়া মাটি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঘিওর থানা অফিসার ইনচার্জ বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে, ঘিওর থানার সাব-ইন্সপেক্টর( এসআই) আব্দুল কাদের ঘটনাস্থলে এসে সরেজমিন তদন্ত করেন। পরে, লিটনসহ অজ্ঞাতনামা পনের বিশজনের নামে থানায় মামলা নথিভুক্ত হয়েছে।
ধূলণ্ডী গ্রামের মৃত,জাবেদ আলী মাস্টারের ছেলে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মাটি ব্যবসায়ীরা পুখুরিয়া এবং বড় ধূলণ্ডী মৌজা থেকে মাটি কাটা শুরু করেছেন। এখানে মাটি কাটা অব্যাহত থাকলে এলাকার আব্দুস সামাদ, সেকেন্দার আলী, আব্দুস সাত্তার, আরশেদ আলী, গহের মল্লিক, আব্দুর রফিক, সেণ্টু মিয়া, মো.ইউনুছ আলী, সিদ্দিকুর রহমান, শাহজাহান, দেবী ও রঞ্জিত আচার্যের স্ত্রী, আলো আচার্য ও হাসেম মোল্লাসহ পাশ্ববর্তী জমির মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। অনতিবিলম্বে ফসলিজমি রক্ষায় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
সিংগাইর উপজেলার বায়রা ইউনিয়নের
মাটি ও ভেকু ব্যবসায়ী মো.হাসেম আলী বলেন, শিবালয়ের আব্দুর রহিম খানের ভাতিজা দেলোয়ার খান, তাঁর ম্যানেজার মোশারফ হোসেন ও তোফাজ্জল চেয়ারম্যান মিলে রহিম খানের ধূলণ্ডী মৌজার জমি থেকে মাটি কেটে ইট ভাটায় দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু ডাইবেশন তৈরিতে কৃষকদের সাথে ঝামেলা হওয়ায় আপাততঃ মাটির সাইড বন্ধ রয়েছে।
ধূলণ্ডী গ্রামের লিটনকে ডাইবেশনের জন্য এ পর্যন্ত সাড়ে ৩ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। কিন্তু সে কৃষকদের টাকা বুঝিয়ে না দেয়ায় ঝামেলা হয়েছিল। তবে, সোমবার দুপুরে দেলোয়ার খান ঘিওর থানায় গিয়ে ঝামেলা মিটিয়ে ফেলেছেন। এখন আর কোন সমস্যা নেই।
রহিম খানের ভাতিজা দেলোয়ার খান জানান, বিষয়টি মীমাংসার উদ্দেশ্যে তিনি ঘিওর থানায় গিয়েছিলেন। কিন্তু কোন সুরাহা হয়নি। থানায় মামলা নথিবদ্ধ হয়েছে।
মামলার প্রধান অভিযুক্ত মো.লিটন জানান, বিষয়টি মীমাংসা হয়নি। থানায় মামলা হয়েছে। হাসেমের নিকট থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা গ্রহণের কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।
এবিষয়ে জানতে জমির মালিক আব্দুর রহিম খানের মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
ঘিওর থানা অফিসার ইনচার্জ সুকুমার বিশ্বাস দৈনিক ভোরের কাগজকে জানান, ফসলি জমির মাটি কাটার ঘটনায় ১জনের নামসহ অজ্ঞাতনামা পনের বিশজনের নামে মামলা হয়েছে।