সৈয়দ মনির আহমদ, সোনাগাজী(ফেনী) :
ছোট ফেনী নদীর সোনাগাজী সাহেবের ঘাট এলাকায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মুছাপুর রেগুলেটর ও ছোট ফেনী নদীর উপর নিমার্ণাধীন সাহেবের ঘাট ব্রিজ হুমকির মুখে পড়েছে।
স্থানীয়রা জানান, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ফসলি জমি ও ঘর-বাড়ি ইতোমধ্যে নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে বালু-দস্যুরা প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পাচ্ছেন না স্থানীয়রা।
এলাকাবাসী, কৃষক ও উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন যাবত ছোট ফেনী নদী থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করে আসছে সোনাগাজী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আজিজুল হক হিরন ও তার সহযোগী সেন্টু মিয়া।
বালু উত্তোলনের ফলে পশ্চিম চরদরবেশ ও পশ্চিম চরচান্দিয়া গ্রামের শতাধিক ঘরবাড়ি ইতোমধ্যে নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। আরো এলাকা বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে এবং বিস্তীর্ণ এলাকা নতুন করে ভাঙনের মুখে পড়েছে।
উপকূলীয় এসব অঞ্চলের অসহায় ও নিরীহ লোকদের আহাজারি শোনার যেন কেউ নেই।
বালু-দস্যুদের সশস্ত্র ক্যাডার বালু মহালের আশপাশে প্রতিনিয়ত সশস্ত্র মহড়া দিয়ে স্থানীয়দের শঙ্কিত করে তুলেছে।
নদী থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে তোলা হচ্ছে বালুসম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে নদী থেকে বালু উত্তোলন করে ইতোমধ্যে বহু লোকের ফসলি জমি ও পুকুর ভরাট করে বালু বিক্রি করে যাচ্ছে বালু-দস্যুরা।
কেউ ভয়ে মুখ খোলার সাহস পাচ্ছেন না। বালু পরিবহনকারী যানবাহনগুলো দেদারছে চলাচলের কারণে এসব এলাকার রাস্তাঘাট ইতোমধ্যে ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। অনেকগুলো সড়ক যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে দুর্ভাগা এলাকাবাসীর দুর্ভোগ যেন কোনোভাবেই কাটছে না।
পশ্চিম চরদরবেশ গ্রামের এক বাসিন্দা জানান, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে প্রায় দেড় শতাধিক একর ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
অবৈধভাবে উত্তোলিত বালু পিকআপ ভ্যানে তোলা হচ্ছেনাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা সাংবাদিকদের বাংলানিউজকে জানান, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের প্রচেষ্টায় নোয়াখালী-ফেনীর যোগাযোগের সেতুবন্ধন তৈরি করতে প্রায় শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে সাহেবের ঘাট ব্রিজ। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নির্মাণাধীন ব্রিজটিও ভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে। এছাড়াও বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষের ঘর-বাড়ি ভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে।
একই ভাবে মুহুরী রেগুলেটর সংলগ্ন মুহুরি নদী থেকে বালু উত্তোলন করছেন উপজেলা আ’লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নুসরাত হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রুহুল আমিন তার সহযোগীদের মাধ্যমে বালু তুলছেন। এতে আমিরাবাদ কয়েকটি গ্রামের ফসলিজমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। রেগুলেটর সংলগ্ন পাউবোর সড়ক ধসে গেছে নদীতে। বস্তা (জিও ব্যাগ) দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে সড়কের ভাঙনস্থল।
স্থানীয় চরদরবেশ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম ভুট্টো জানান, এলাকার ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে ইতোমধ্যে সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে।
বালু উত্তোলনকারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রুহুল আমিন দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে কারাবন্দী থাকায় কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে ফেনীর ফাজিলপুরের চেয়ারম্যান মজিবুল হক রিপন জানান, তার লাইসেন্সের ভিত্তিতেই উপজেলা যুবলীগ সভাপতি আজিজুল হক হিরন ও রুহুলআমিন যথাক্রমে ছোট ফেনী নদী এবং মুহুরি নদীতে বালু তুলছেন। শর্ত মানতে বলা হয়েছে, শর্ত না মানলে ব্যবস্থা নিবে প্রশাসন।
এ ব্যাপারে সোনাগাজী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অনিক চৌধুরী বলেন, সরজমিনে পরিদর্শন করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।